ব্রেকিং নিউজ
পাইকগাছায় সাবেক ইউপি সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রংপুরের সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হাজীগঞ্জে বিয়ের ৪ মাসের সন্তান প্রসব নববধূ আগামীকাল রবিবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ , জানা যাবে যেভাবে পাইকগাছায় লবন পানি বন্ধের দাবীতে পথসভা অনুষ্ঠিত দাকোপে হকার্স ইউনিয়নের আহবায়ক কমিটি গঠন
×

নজরুল ইসলাম তোফা
প্রকাশ : ২৬/১/২০২১ ১০:৩২:১৯ AM

বৃদ্ধ এতিমদের যেভাবে আগলে রাখা হয়েছে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদনে 

এখানকার সবাই শমেস ডাক্তারকে বাবা বলে সম্বোধন করেন।  মুক্তিযোদ্ধা 'শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার' শুরুতেই নিজের স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানা বাবদ অর্থে বারো শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেছিলেন এই এতিমখানাটি। আয় বলতে গেলে মেহেরুন্নেসার সেলায় ফোঁড়া বা শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ।

রাজশাহী শহর থেকে পশ্চাশ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীরঘেঁষে বাঘার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রাম। এ গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি এতিমখানা। নাম দেয়া হয়েছে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন।

এই খানে সব বয়সের হতদরিদ্র নারী-পুরুষ বসবাস করেন। বর্তমানে এতিমের সংখ্যা ১৬৬ জন। বৃদ্ধদের মধ্যে রয়েছে ৬০ জন। এতিমদের মধ্যে ছেলে ১১৫ ও মেয়ে ৫১ জন রয়েছে।

এসব এতিম সন্তানরা কেউই এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা, 'মোঃ শামসুদ্দিন সরকার শমেস' ডাক্তারের রক্তের কেউ নন। ১৯৮৪ সাল হতে তাঁর ৩৫ বছরে পৈতৃক প্রায় ১৭ বিঘা জমি বিক্রি করে এতিম বা বৃদ্ধদের রক্ষা করে আসছেন তিনি।

এখানকার সবাই শমেস ডাক্তারকে বাবা বলে সম্বোধন করেন।  মুক্তিযোদ্ধা 'শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার' শুরুতেই নিজের স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানা বাবদ অর্থে বারো শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেছিলেন এই এতিমখানাটি। আয় বলতে গেলে মেহেরুন্নেসার সেলায় ফোঁড়া বা শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ।

যারা এই খানে এতিম, তাদের মধ্যেই কারো কারো বাবা নেই, কারো বা মা নেই, আবার কেউ অকালেই বাবা-মা দুজনকে হারিয়েছে। একেকজনের জীবনের গল্পটা যেন একেক রকম। অসহায়দের পরিবারের কোন খোঁজ নেই কিংবা এরা কেউ কেউ পরিত্যাক্ত।

আবার কেউ অভাব অনটনে দূর্ভাগ্যক্রমে যেন পরিবার বিছিন্ন হওয়া মানুষ। এদের পরিবারও নেই, আনন্দও নেই। তাই এতিমখানায় যতটুকু আনন্দ আছে তা পরিচালক শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তারের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। সুতরাং বাবা বলে ডাকার মধ্যে সবাই আনন্দ খুঁজে।

তিনি এতিমদের রক্ষার্থেই শেষ পর্যন্ত বাড়ির ভিটা বিক্রি করে আজকে নিজ পরিবার নিয়ে গৃহহীন হয়ে আছেন। পল্লী চিকিৎসক পরিবার নিয়ে খুব বিপাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে উঠে আসেন এতিমখানায়। স্ত্রী মেহেরুন্নেসা শিশুদের দেখা শুনা বা তাদের জন্যে 'রান্না' করেন ৩ বেলা।

এখন মেহেরুন্নেসা সেখানকার একজন সেবিকা। বিনিময়ে দুটো খেতে পান মাত্র। বর্তমানে ১৬৬ জন এতিম ও ৬০ জন বৃদ্ধসহ তারা স্বামী-স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সবাই এক সঙ্গে দিন রাত কাটান।

এতিমখানার পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার বলেন,- নিজের স্ত্রীর অর্থ, ছেলে-মেয়ের অর্থ, সরকাররি, বেসরকারি কিংবা ব্যাক্তিগত ভাবে যে, সহযোগিতা পায়, তা দিয়ে ছয় মাস চলে। আর ছয় মাস বিভিন্ন দোকানে বাঁকি রাখতে হয়। বছর শেষে দশ  হতে ১২ লক্ষ টাকা ঋনের মধ্যে থাকতে হয়।

সরকার কিংবা হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা পেলে অন্তত এই ঋণ থেকে মুক্তি পেত। এছাড়াও এবার যেভাবে বছরের প্রথম থেকে শীত শুরু হয়েছে। এই শীতে 'বৃদ্ধ ও এতিম' শিশুদের নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছেন।

✍️লেখক:
নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা,

চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।